সাইটটি নির্মাণাধীন রয়েছে, ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
গোপালগঞ্জ জেলার, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নারকেল বাড়ি নামে একটি ছোট্র গ্রাম । এক সময় এটি ছিল শাহাপুর পরগনার মধ্যে । ঐ গ্রামে মন্ডল বংশ একটি বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী বংশ । এই বংশে যত লোক জন্মগ্রহন করেছেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মহৎ এবং হরিভক্ত । যতদুরের কথা জানাযায় তাগোপালগঞ্জ জেলার, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নারকেল বাড়ি নামে একটি ছোট্র গ্রাম । এক সময় এটি ছিল শাহাপুর পরগনার মধ্যে । ঐ গ্রামে মন্ডল বংশ একটি বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী বংশ । এই বংশে যত লোক জন্মগ্রহন করেছেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মহৎ এবং হরিভক্ত । যতদুরের কথা জানাযায় তাতে কেনাই মন্ডলের থেকে শুরু করতে হয় । কেনাই মন্ডল ছিলেন একনিষ্ট কৃশ্নভক্ত । তাঁর ছিল চার পুত্র যথা অযোধ্যারাম, হরেকৃশ্ন , সৃষ্টিধর এবং নয়ন । তারা সবাই পরম ভক্ত ছিলেন সাগোপালগঞ্জ জেলার, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নারকেল বাড়ি নামে একটি ছোট্র গ্রাম । এক সময় এটি ছিল শাহাপুর পরগনার মধ্যে । ঐ গ্রামে মন্ডল বংশ একটি বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী বংশ । এই বংশে যত লোক জন্মগ্রহন করেছেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মহৎ এবং হরিভক্ত । যতদুরের কথা জানাযায় তাতে কেনাই মন্ডলের থেকে শুরু করতে হয় । কেনাই মন্ডল ছিলেন একনিষ্ট কৃশ্নভক্ত । তাঁর ছিল চার পুত্র যথা অযোধ্যারাম, হরেকৃশ্ন , সৃষ্টিধর এবং নয়ন । তারা সবাই পরম ভক্ত ছিলেন সাধু সেবাই ছিল তাদের প্রবল আগ্রহ । তাঁদের বিশদ বিবরন শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে । অযোধ্যারামের হলো তিন পুত্র, যথাক্রমে ঠাকুরদাস,জয়কৃশ্ন ও চন্দ্রকান্ত । ঠাকুরদাসের তিন পুত্র । এই তিন পুত্র হলো রামাকুমার , বংশীভর, ও গোলক ।
#শ্রীপাট #গোলকপাগল #নারিকেলবাড়ি #Golokpagol
#মতুয়া #matuadol #মতুয়া_সম্প্রদায় #motua #motuatv #golok #হরিচাঁদ #harichadthakur #harinam #গুরুচাঁদ #
Transcript
Follow along using the transcript.
Show transcript
Show less
ধু সেবাই ছিল তাদের প্রবল আগ্রহ । তাঁদের বিশদ বিবরন শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে । অযোধ্যারামের হলো তিন পুত্র, যথাক্রমে ঠাকুরদাস,জয়কৃশ্ন ও চন্দ্রকান্ত । ঠাকুরদাসের তিন পুত্র । এই তিন পুত্র হলো রামাকুমার , বংশীভর, ও গোলক তে কেনাই মন্ডলের থেকে শুরু করতে হয় । কেনাই মন্ডল ছিলেন একনিষ্ট কৃশ্নভক্ত । তাঁর ছিল চার পুত্র যথা অযোধ্যারাম, হরেকৃশ্ন , সৃষ্টিধর এবং নয়ন । তারা সবাই পরম ভক্ত ছিলেন সাধু সেবাই ছিল তাদের প্রবল আগ্রহ । তাঁদের বিশদ বিবরন শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে । অযোধ্যারামের হলো তিন পুত্র, যথাক্রমে ঠাকুরদাস,জয়কৃশ্ন ও চন্দ্রকান্ত । ঠাকুরদাসের তিন পুত্র । এই তিন পুত্র হলো রামাকুমার , বংশীভর, ও গোলক
শ্রী শ্রী গোলক চাঁদ জন্ম ১২০৭ বঙ্গাব্দে ফরিদপুর জেলার সাহাপুর পরগনা নারকেলবাড়ী গ্রামে। পিতা ঠাকুরদাস মণ্ডল, মাতা সুলক্ষণা দেবী। ঠাকুরদাসের তিন পুত্র জ্যেষ্ঠ রামকুমার, মেজ বংশীধর, কনিষ্ঠ গোলোকচন্দ্র। রাউৎখামারের রামচাঁদ হরি ঠাকুরের পারিষদের মধ্যে অন্যতম। রামকুমারের ভাইপো দশরথ। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের তিরোভাবের ১ বছর দেড়মাস পরে গোলোক পাগল মহাপ্রস্থানের ইচ্ছা করেন। ১২৮৬ বঙ্গাব্দের ২৯শে বৈশাখ শনিবার পূর্ণিমা তিথিতে তিরোভাব (দ্র:- ১২৮৬ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমা ছিল ২৪ শে বৈশাখ, মঙ্গলবার / ৬ মে, ১৮৭৯ খ্রি:)। নবগঙ্গা নদীর জলে সলিল সমাধি।
গোস্বামী গোলকের বানর মূর্তি ধারণ ও গঙ্গা দর্শন
__________________________________________
একদিন গোস্বামী গোলক গঙ্গাচর্না গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হয়ে পাগলামী করতে করতে পথ দিয়ে চলছেন, পথিমধ্যে অক্রুর বিশ্বাস ও রামকুমার বিশ্বাস নামে দুই ভক্ত গোস্বামীকে দেখে তাঁর সংগে এসে মিশলেন। দু,জনকে পেয়ে তিনিও মহা খুশী। উভয় উভয়কে দেখে প্রেমে পুলকিত। তিনজন চলতে চলতে পাটগাতি খেয়া ঘাট এসে উপস্থিত। খেয়া নৌকায় পার হচ্ছেন, অপর পাড় ভাঙ্গন কূল, খাড়ি জায়গা, নৌকা কূলে আসতে ৫০/৬০ হাত বাকী থাকতেই গোলক নৌকা থেকে লাফ দিলেন এবং বায়ুভরে গিয়ে জল থেকে চারহাত উচু পাড়ে গিয়ে পড়লেন। মনে হল যেন ভুমিকম্প হয়ে গেল, তাতে নদীর জলও উথলে উঠলো। এই দৃশ্য সবে দেখে বিস্মিত হলো, নৌকার মাঝি বলল-- ইনি তো সামান্য মানুষ নন। তীরে এসে গোলক দৌড়ে গিয়ে গঙ্গাচর্না কার্তিকের ঘরে এসে হরিনামে মেতে উঠলেন। একে একে তাঁর সঙ্গী অক্রুর ও রামকুমার তারও এলেন এবং তারা শম্ভুনাথের ঘরে গিয়ে বসলেন। তারা শম্ভুনাথকে জিজ্ঞাসা করেন গোস্বামীজী কোথায় আছেন তা জানতে চান। তিনি গোলক গোস্বামী কোথায় আছেন তা জানতো না তাই তিনি গোলকের সন্ধানে বের হলেন। এদিকে গোস্বামী মনে মনে ভাবছেন কার্তিক যদি তাঁদের দু,জনকে তাঁর কাছে আনতো তবে ভাল হতো। তাঁর মন বুঝে কার্তিক তাঁদের দু,জনকে ডেকে নিয়ে এলেন, কিন্তু তারা রাইচরণের ঘরে গিয়ে বসলেন এবং প্রেমানন্দে মেতে দু,জনে হরিনাম করেন। গোস্বামী কার্তিকের ঘরে বসে হরিনাম করছে, সেটা তারা শুনছেন। কার্তিকের স্ত্রীও গোলকের পাশে বসে মৃদুস্বরে হরিনাম করছেন, তা দেখে কার্তিকেরও ভাল লাগল এবং নিজেও প্রেমানন্দে হরিনাম করতে লাগলেন।
হরিভক্ত অক্রুর ও রামকুমার না আসায় তিনি নিজে গেলেন তাদের কাছে, তাদের দু,জনকে এনে মদনের ঘরে রাখলেন এবং নিজে বাহিরে গিয়ে হরি নাম করতে লাগলেন এবং নিজেও প্রেমানন্দে হরিনাম করতে লাগলেন। একে একে সেখানে বহুভক্ত এলেন এবং হরিনাম করতে লাগলেন।
এই মদনের একটু পরিচয় দেয়া দরকার--
ঐ গ্রামে নিমাই নামে এক ব্যক্তি ছিল, তার দুই পুত্র চাঁদ ও ধাতুরাম, ধাতুরামের পুত্র হল ঠাকুরদাস, তাঁর পুত্রের নাম হল রামনিধি তিনি ভক্ত মানুষ, রামনিধির তিন পুত্র-- বড় মোহন, মধ্যম মদন এবং ছোট বনমালী। এই মদনের ঘরেই তাদের বসালেন।
গোলক একবার মদনের বাড়ি আর এক বার কার্তিকের বাড়ি ঘুরপাক করে হরিনাম করছেন। যেন উন্মত্ত পাগল, মাঝে মাঝে কার্তিকেও তাঁর সাথে ঘুরতে লাগেন।
কার্তিক ও রাইচরণের বাড়ির যুবক বুড়ো যত লোক ছিল সকলেই হরিনাম করতে লাগল, বহুলোক সেখানে সমাগত হয়েছে।
সবাই প্রেমানন্দে ভাসছে, গোস্বামী হুঙ্কার ছেড়ে বীর বিক্রমে লম্ফঝম্প দিয়ে হরিনামে মাতোয়ারা, এক এক বার লাফ দিচ্ছেন তাতে ভূমিকম্পের মতো বাড়ি কাঁপতে লাগল। তিন চারটি বাড়ির লোকেরা সেই কম্পন অনুভব করতে লাগল। গোস্বামী গোলকের উপর কার্তিকের খুব আর্তি ছিল, হঠাৎ তিনি গোলকের বানর রূপ দেখতে পেলেন।
লম্ফ দিয়া দশ বার হাত উর্দ্ধ হয়।
লাঙ্গুল ঠেকিল গিয়া কার্তিকের গায়।।
শূন্য মার্গে রাম রাম রাম রাম বলে।
অতি ভীমকায়, লম্বাপুচ্ছ, পিছে ঝুলে।।
--------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত।
এই দৃশ্য দেখে ভক্ত কার্তিক আর স্থির থাকতে পারলেন না, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গিয়ে অক্রুর ও রামকুমারকে ডেকে বললেন- তোমরা তাড়াতাড়ি এসো দেখে যাও গোলকের কি রূপ? একা আমি দেখলাম আর তোমরা দেখলেনা। তার ডাক শুনে বাইরে এসে বানর মূর্তি দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়লেন। আমনি গোলক এসে তাঁদের তুলে ধরে বললেন- তোরা কী দেখে মুর্ছিত হলি? উঠে হরিনাম কর। শম্ভুনাথকে বললেন তুই কী দেখলি? তিনি উত্তরে বলেন- আমি ১০/১২ হাত লেজ দেখেছি। গোস্বামী গোলকের মনে এবার বুঝি দয়া হল। বললেন- আজ আর কাউকে ফাঁকী দেবনা, দেখাইব যাহা আছে দেখাইবার বাকী। এ গ্রামে রামা শ্যামা যে যেখানে আছে ডেকে নিয়ে আয়, সকলে দেখুক আমি বানর প্রধান। এরপর তিনি চূড়ামণির পুত্র রামমোহন, ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত মাতা তোলাবতী ও অন্যান সবাইকে ডেকে বললেন- তোরা সবাই চলে আয়, অনেক বেলা হয়েগেছে, চল স্নান করে আসি। সবাই হরি ধ্বনি দিয়ে স্নানের ঘাটে চললো।
আগে আগে মতুয়ারা চলছে আর সবার পিছনে গোলক, সবার মুখে হরিনাম, হরিনামের ধ্বনি যেন গগণ মন্ডলে উঠে গেল। তিনি আরো বললেন সবাই ঘাটে নাম আর আমি নামব অঘাটে। সবাই তাঁর আজ্ঞা অনুসারে জলে নেমে গেল, একথা বলেই তিনি ঘাট ছেড়ে আরো পশ্চিম দিকে গেলেন। সংগে সংগে শম্ভুনাথ, কার্তিক, অক্রুর, রামকুমার প্রমুখ ভক্তগণ তাঁর পিছে পিছে দৌড়ে গেলেন। গোলক হরিধ্বনি দিয়ে এক লাফে জলে পড়লেন এবং জল ওলট পালট করে জলকেলি করতে লাগলেন। লাফ দিয়ে জলে পড়ার সময় পুনরায় তাঁর লেজ দেখা গেল। পূর্ব দিকে যখন অন্যরা জলকেলি করছিল তখন গোলক ছিলেন পশ্চিম দিকে। সকলে জল ছিটাবার ফলে মনে হচ্ছিল যেন মেঘ থেকে বৃষ্টি হচ্ছে সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এমন সময় সেখানে মকর ভেসে উঠলো, গোস্বামী মকরকে মস্তকে ধারণ করলেন। এই বিরল দৃশ্য সবাই দেখতে পায়নি, কারো দৃষ্টি গোস্বামীর দিকে যায়নি, কার্তিক ও ঐ তিন জন ভাগ্যবান ভক্ত দেখেলেন তিনি জলের উপরে যোগাসনে বসে আছেন।
পুকুরের মধ্য থেকে জল এমনভাবে উপরে উঠছে যেন বৃষ্টি হচ্ছে, বা কেউ উঠাচ্ছে কিংবা বর্ষণ করছে তা বোঝা যাচ্ছেনা---
জল হতে উঠে জল বৃষ্টি যেন হয়।
কেবা বরিষণ করে কে জল উঠায়।।
------------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৪৯/২
এক সময় গোলকের মাথা হতে মকর জলে পড়লো, তিনি এবার মকরের পিঠে চড়ে বসলেন। কিছুক্ষণ পর তারা দেখলেন মকরের পিঠে গোস্বামী নেই, তার তার স্থানে দেবী গঙ্গা বসে আছেন। গোস্বামী জলে ভেসে বেড়াচ্ছেন, এক সময় তিনি কুলে এলেন, গঙ্গাকে দেখামাত্র তিনি গঙ্গার কাছে গিয়ে তার পদযুগল মাথায় রাখলেন। এবার গঙ্গাদেবী সন্তান তুল্য গোলককে কোলে তুলে নিলেন----
গঙ্গাদেবী ধরিয়া পাগলে করে কোলে।
সিংহনাদে পাগল ডেকেছে মা বলে।।
পাগল বলেন করি পদে জলকেলি।
অপরাধ ক্ষম মাতা নিজ পুত্র বলি।।
গঙ্গা বলে তুমি হরিচাঁদ প্রিয় পাত্র।
আমি তব অঙ্গ স্পর্শে হইনু পবিত্র।।
--------------------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৪৯/২
এই অদৃশ্যপূর্ব ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী ঐ চারজন ভগ্যবান ভক্ত। এ দৃশ্য যে না দেখেছে সে কিছুতেই বুঝতে পারবেনা। গোলকের দয়াগুণে ঐ ভাগ্যবানেরাই দর্শন পেলেন তবে দর্শনমাত্র অচেতন হয়ে পড়লেন।
পূর্ব ঘাটে যারা ছিলেন তারা দেখেন পশ্চিম ঘাটে বৃষ্টি হয়ে গেল। গোলক সাঁতার দিয়ে কুলে উঠে অচেতন চার জনকে ধরে তুললেন, ঘাটের উত্তর দিকে গঙ্গাচর্না গ্রাম ও দক্ষিণে গোগ। এখানেই গোলকের সংগে গঙ্গার দর্শন তথা গঙ্গা স্নান হয়ে গেল।
তথা স্নানে পূর্ণ হয় সব মনস্কাম।
গঙ্গাতূল্য ঘাট '' বেলে ঘাট নাম।।
--------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৫০/১
এই ঘাটটি গোলক গোস্বামী জন্য পূণ্য ক্ষেত্র বা তীর্থস্থান বলে পরিচিতি লাভ করেছে। মকর বাহিনী গঙ্গার আগমনের জন্য গ্রামের নাম গঙ্গাচর্না হয়েছে নাকি সেটা কিংবদন্তী আছে।
হরিবল হরিবল হরিবল।
গোস্বামী গোলকের বানর মূর্তি ধারণ ও গঙ্গা দর্শন
__________________________________________
একদিন গোস্বামী গোলক গঙ্গাচর্না গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হয়ে পাগলামী করতে করতে পথ দিয়ে চলছেন, পথিমধ্যে অক্রুর বিশ্বাস ও রামকুমার বিশ্বাস নামে দুই ভক্ত গোস্বামীকে দেখে তাঁর সংগে এসে মিশলেন। দু,জনকে পেয়ে তিনিও মহা খুশী। উভয় উভয়কে দেখে প্রেমে পুলকিত। তিনজন চলতে চলতে পাটগাতি খেয়া ঘাট এসে উপস্থিত। খেয়া নৌকায় পার হচ্ছেন, অপর পাড় ভাঙ্গন কূল, খাড়ি জায়গা, নৌকা কূলে আসতে ৫০/৬০ হাত বাকী থাকতেই গোলক নৌকা থেকে লাফ দিলেন এবং বায়ুভরে গিয়ে জল থেকে চারহাত উচু পাড়ে গিয়ে পড়লেন। মনে হল যেন ভুমিকম্প হয়ে গেল, তাতে নদীর জলও উথলে উঠলো। এই দৃশ্য সবে দেখে বিস্মিত হলো, নৌকার মাঝি বলল-- ইনি তো সামান্য মানুষ নন। তীরে এসে গোলক দৌড়ে গিয়ে গঙ্গাচর্না কার্তিকের ঘরে এসে হরিনামে মেতে উঠলেন। একে একে তাঁর সঙ্গী অক্রুর ও রামকুমার তারও এলেন এবং তারা শম্ভুনাথের ঘরে গিয়ে বসলেন। তারা শম্ভুনাথকে জিজ্ঞাসা করেন গোস্বামীজী কোথায় আছেন তা জানতে চান। তিনি গোলক গোস্বামী কোথায় আছেন তা জানতো না তাই তিনি গোলকের সন্ধানে বের হলেন। এদিকে গোস্বামী মনে মনে ভাবছেন কার্তিক যদি তাঁদের দু,জনকে তাঁর কাছে আনতো তবে ভাল হতো। তাঁর মন বুঝে কার্তিক তাঁদের দু,জনকে ডেকে নিয়ে এলেন, কিন্তু তারা রাইচরণের ঘরে গিয়ে বসলেন এবং প্রেমানন্দে মেতে দু,জনে হরিনাম করেন। গোস্বামী কার্তিকের ঘরে বসে হরিনাম করছে, সেটা তারা শুনছেন। কার্তিকের স্ত্রীও গোলকের পাশে বসে মৃদুস্বরে হরিনাম করছেন, তা দেখে কার্তিকেরও ভাল লাগল এবং নিজেও প্রেমানন্দে হরিনাম করতে লাগলেন।
হরিভক্ত অক্রুর ও রামকুমার না আসায় তিনি নিজে গেলেন তাদের কাছে, তাদের দু,জনকে এনে মদনের ঘরে রাখলেন এবং নিজে বাহিরে গিয়ে হরি নাম করতে লাগলেন এবং নিজেও প্রেমানন্দে হরিনাম করতে লাগলেন। একে একে সেখানে বহুভক্ত এলেন এবং হরিনাম করতে লাগলেন।
এই মদনের একটু পরিচয় দেয়া দরকার--
ঐ গ্রামে নিমাই নামে এক ব্যক্তি ছিল, তার দুই পুত্র চাঁদ ও ধাতুরাম, ধাতুরামের পুত্র হল ঠাকুরদাস, তাঁর পুত্রের নাম হল রামনিধি তিনি ভক্ত মানুষ, রামনিধির তিন পুত্র-- বড় মোহন, মধ্যম মদন এবং ছোট বনমালী। এই মদনের ঘরেই তাদের বসালেন।
গোলক একবার মদনের বাড়ি আর এক বার কার্তিকের বাড়ি ঘুরপাক করে হরিনাম করছেন। যেন উন্মত্ত পাগল, মাঝে মাঝে কার্তিকেও তাঁর সাথে ঘুরতে লাগেন।
কার্তিক ও রাইচরণের বাড়ির যুবক বুড়ো যত লোক ছিল সকলেই হরিনাম করতে লাগল, বহুলোক সেখানে সমাগত হয়েছে।
সবাই প্রেমানন্দে ভাসছে, গোস্বামী হুঙ্কার ছেড়ে বীর বিক্রমে লম্ফঝম্প দিয়ে হরিনামে মাতোয়ারা, এক এক বার লাফ দিচ্ছেন তাতে ভূমিকম্পের মতো বাড়ি কাঁপতে লাগল। তিন চারটি বাড়ির লোকেরা সেই কম্পন অনুভব করতে লাগল। গোস্বামী গোলকের উপর কার্তিকের খুব আর্তি ছিল, হঠাৎ তিনি গোলকের বানর রূপ দেখতে পেলেন।
লম্ফ দিয়া দশ বার হাত উর্দ্ধ হয়।
লাঙ্গুল ঠেকিল গিয়া কার্তিকের গায়।।
শূন্য মার্গে রাম রাম রাম রাম বলে।
অতি ভীমকায়, লম্বাপুচ্ছ, পিছে ঝুলে।।
--------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত।
এই দৃশ্য দেখে ভক্ত কার্তিক আর স্থির থাকতে পারলেন না, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গিয়ে অক্রুর ও রামকুমারকে ডেকে বললেন- তোমরা তাড়াতাড়ি এসো দেখে যাও গোলকের কি রূপ? একা আমি দেখলাম আর তোমরা দেখলেনা। তার ডাক শুনে বাইরে এসে বানর মূর্তি দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়লেন। আমনি গোলক এসে তাঁদের তুলে ধরে বললেন- তোরা কী দেখে মুর্ছিত হলি? উঠে হরিনাম কর। শম্ভুনাথকে বললেন তুই কী দেখলি? তিনি উত্তরে বলেন- আমি ১০/১২ হাত লেজ দেখেছি। গোস্বামী গোলকের মনে এবার বুঝি দয়া হল। বললেন- আজ আর কাউকে ফাঁকী দেবনা, দেখাইব যাহা আছে দেখাইবার বাকী। এ গ্রামে রামা শ্যামা যে যেখানে আছে ডেকে নিয়ে আয়, সকলে দেখুক আমি বানর প্রধান। এরপর তিনি চূড়ামণির পুত্র রামমোহন, ঠাকুরের প্রিয় ভক্ত মাতা তোলাবতী ও অন্যান সবাইকে ডেকে বললেন- তোরা সবাই চলে আয়, অনেক বেলা হয়েগেছে, চল স্নান করে আসি। সবাই হরি ধ্বনি দিয়ে স্নানের ঘাটে চললো।
আগে আগে মতুয়ারা চলছে আর সবার পিছনে গোলক, সবার মুখে হরিনাম, হরিনামের ধ্বনি যেন গগণ মন্ডলে উঠে গেল। তিনি আরো বললেন সবাই ঘাটে নাম আর আমি নামব অঘাটে। সবাই তাঁর আজ্ঞা অনুসারে জলে নেমে গেল, একথা বলেই তিনি ঘাট ছেড়ে আরো পশ্চিম দিকে গেলেন। সংগে সংগে শম্ভুনাথ, কার্তিক, অক্রুর, রামকুমার প্রমুখ ভক্তগণ তাঁর পিছে পিছে দৌড়ে গেলেন। গোলক হরিধ্বনি দিয়ে এক লাফে জলে পড়লেন এবং জল ওলট পালট করে জলকেলি করতে লাগলেন। লাফ দিয়ে জলে পড়ার সময় পুনরায় তাঁর লেজ দেখা গেল। পূর্ব দিকে যখন অন্যরা জলকেলি করছিল তখন গোলক ছিলেন পশ্চিম দিকে। সকলে জল ছিটাবার ফলে মনে হচ্ছিল যেন মেঘ থেকে বৃষ্টি হচ্ছে সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এমন সময় সেখানে মকর ভেসে উঠলো, গোস্বামী মকরকে মস্তকে ধারণ করলেন। এই বিরল দৃশ্য সবাই দেখতে পায়নি, কারো দৃষ্টি গোস্বামীর দিকে যায়নি, কার্তিক ও ঐ তিন জন ভাগ্যবান ভক্ত দেখেলেন তিনি জলের উপরে যোগাসনে বসে আছেন।
পুকুরের মধ্য থেকে জল এমনভাবে উপরে উঠছে যেন বৃষ্টি হচ্ছে, বা কেউ উঠাচ্ছে কিংবা বর্ষণ করছে তা বোঝা যাচ্ছেনা---
জল হতে উঠে জল বৃষ্টি যেন হয়।
কেবা বরিষণ করে কে জল উঠায়।।
------------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৪৯/২
এক সময় গোলকের মাথা হতে মকর জলে পড়লো, তিনি এবার মকরের পিঠে চড়ে বসলেন। কিছুক্ষণ পর তারা দেখলেন মকরের পিঠে গোস্বামী নেই, তার তার স্থানে দেবী গঙ্গা বসে আছেন। গোস্বামী জলে ভেসে বেড়াচ্ছেন, এক সময় তিনি কুলে এলেন, গঙ্গাকে দেখামাত্র তিনি গঙ্গার কাছে গিয়ে তার পদযুগল মাথায় রাখলেন। এবার গঙ্গাদেবী সন্তান তুল্য গোলককে কোলে তুলে নিলেন----
গঙ্গাদেবী ধরিয়া পাগলে করে কোলে।
সিংহনাদে পাগল ডেকেছে মা বলে।।
পাগল বলেন করি পদে জলকেলি।
অপরাধ ক্ষম মাতা নিজ পুত্র বলি।।
গঙ্গা বলে তুমি হরিচাঁদ প্রিয় পাত্র।
আমি তব অঙ্গ স্পর্শে হইনু পবিত্র।।
--------------------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৪৯/২
এই অদৃশ্যপূর্ব ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী ঐ চারজন ভগ্যবান ভক্ত। এ দৃশ্য যে না দেখেছে সে কিছুতেই বুঝতে পারবেনা। গোলকের দয়াগুণে ঐ ভাগ্যবানেরাই দর্শন পেলেন তবে দর্শনমাত্র অচেতন হয়ে পড়লেন।
পূর্ব ঘাটে যারা ছিলেন তারা দেখেন পশ্চিম ঘাটে বৃষ্টি হয়ে গেল। গোলক সাঁতার দিয়ে কুলে উঠে অচেতন চার জনকে ধরে তুললেন, ঘাটের উত্তর দিকে গঙ্গাচর্না গ্রাম ও দক্ষিণে গোগ। এখানেই গোলকের সংগে গঙ্গার দর্শন তথা গঙ্গা স্নান হয়ে গেল।
তথা স্নানে পূর্ণ হয় সব মনস্কাম।
গঙ্গাতূল্য ঘাট '' বেলে ঘাট নাম।।
--------------------- শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১৫০/১
এই ঘাটটি গোলক গোস্বামী জন্য পূণ্য ক্ষেত্র বা তীর্থস্থান বলে পরিচিতি লাভ করেছে। মকর বাহিনী গঙ্গার আগমনের জন্য গ্রামের নাম গঙ্গাচর্না হয়েছে নাকি সেটা কিংবদন্তী আছে।
হরিবল হরিবল হরিবল হরিবল হরিবল হরিবল হরিবল।